বছর দুয়েক আগে এক কোরিয়ান ভদ্রলোক, যিনি ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশে গার্মেন্টস ব্যবসা করছেন,তিনি আমাদের ডাকলেন
 |
ইন্জিনিয়ারিং ড্রয়িং ও ফ্যাক্টরি প্ল্যানিং-এর মধ্যে কোনটি আগে হবে | HomeDesignCC |
জানালেন যে তিনি একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরি করবেন। ১৫ বিঘা জমির উপর দোতলা স্টিল বিল্ডিং হবে, এবং তিনি চান একটি পরিবেশবান্ধব (গ্রিন সার্টিফিকেটধারী) ফ্যাক্টরি বানাতে।
সবই ঠিক ছিল। গোল বাধলো কয়েক জায়গায়।
প্রথমতঃ তিনি চান সোয়েটার তৈরীর জন্য যেসব অটোমেটিক জ্যাকার্ড মেশিনগুলো তিনি কিনবেন, সেগুলোকে দোতলায় রাখতে।
দ্বিতীয়তঃ তিনি চান জমির চারপাশে ১০ ফিট করে রাস্তা রেখে একটা দোতলা বিল্ডিং-এর আর্কিটেকচারাল ও স্ট্রাকচারাল ড্রইং করে ফেলতে, যাতে তিনি ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন। বিল্ডিং-এর প্ল্যানিং হলে তিনি স্বিদ্ধান্ত নেবেন কোথায় কোন মেশিন কিভাবে বসাবেন।
স্বাভাবিকভাবেই তিনি তার অভিজ্ঞতার আলোকে এই ফ্যাক্টরি নিয়ে যথেষ্ট পরিকল্পনা করেছেন।
কিন্তু আমাদের কিছু অবজারভেশন ছিল।
১. জ্যাকার্ড মেশিনগুলো প্রতিটি কমপক্ষে ১ টন (এক হাজার কিলোগ্রাম) হয়। তার প্রজেক্ট প্রায় ৫০০ টি জ্যাকার্ড মেশিনের। একটি স্টিল বিল্ডিং এর দোতলায় ৫০০টি জ্যাকার্ড মেশিন রাখা অবশ্যই সম্ভব, কিন্তু তাতে মেশিনের লোড সামলাতে বিল্ডিং-এর কনস্ট্রাকশনের খরচ যা বাড়বে, সেটার জন্য তিনি প্রস্তুত কি না?
২. আর্কিটেকচারাল ড্রইং করতে হলে বিল্ডিং-এর ভেতরের পার্টিশনগুলোর অবস্থান জানতে হবে, যেটার জন্য অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ের একটা মেশিন লে-আউট দরকার।
৩. এই ড্রইংগুলো করতে হয় অটোক্যাড সফটওয়্যার-এ। এই সফটওয়্যার-এর মাধ্যমে আগে আর্কিটেকচারাল ও স্ট্রাকচারাল ড্রইং করলে বিল্ডিং-এর কলামগুলো চিহ্নিত করতে হয়। এখন যদি প্রথমে কলাম বসান, তার অনেক পরে পরিকল্পনা করেন কোথায় মেশিন বসাবেন, তবে দেখা যাবে, কলামগুলোর অবস্থানের কারনে মেশিনগুলো ঠিকমতো বসাতে পারা যাচ্ছে না। জায়গা নস্ট হচ্ছে, সৌন্দর্য্য নস্ট হচ্ছে, প্রোডাকটিভিটি নস্ট হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে।
মেশিনের চারপাশে কতটুকু চলাচলের জায়গা রাখতে হবে, উৎপাদন ও মেইনটেনেন্স-এর জন্য কিভাবে মেশিন বসাতে হবে, এর সুনির্দিস্ট কিছু নিয়ম আছে। এগুলো মেনে না চললে পরবর্তীতে প্রোডাকটিভিটি ও কমপ্লায়েন্স নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। ভুল মেশিন লে-আউটের জন্য কর্মীর সংখ্যাও বেড়ে যায়।
৪. তার সাথে আলোচনার মধ্যেখানে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, তিনি পুরাতন উৎপাদনের পদ্ধতিতে অভিজ্ঞ, আর সে নিয়মেই তিনি তার ফ্যাক্টরি সাজাতে চান।
সোয়েটার উৎপাদনে বাংলাদেশে সম্পূর্ণ দুই ধরনের পদ্ধতি চালু আছে। পুরাতন বা কনভেনশনাল পদ্ধতি, এবং আধুনিক পদ্ধতি। আধুনিক পদ্ধতিতে ম্যানপাওয়ার অনেক কম লাগে, অপচয় হয় অনেক কম, প্রোডাকটিভিটি অনেক বেশী হওয়ায় মুনাফা অনেক বেশী হয়।
সৌভাগ্যের বিষয়, সেই কোরিয়ান ভদ্রলোক ছিলেন অত্যন্ত প্রফেশনাল। যুক্তি মানতে, নতুন প্রযুক্তিকে গ্রহন করতে তার কোন আপত্তি ছিলনা। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি একজন অভিজ্ঞ, বুদ্ধিমান ও ঝানু ব্যবসায়ী। কোন পথে গেলে ব্যবসায় ভালো হবে, এটা তিনি খুব ভালোই বুঝতে পেরেছিলেন।
পরবর্তী দুই মিটিং-এ তিনি আমাদের সব অবজারভেশনই যৌক্তিক বলে মেনে নেন এবং সে অনুযায়িই তার ফ্যাক্টরি তৈরী করেন। আজ তার ফ্যাক্টরিটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর, সাজানো গোছানো ফ্যাক্টরি।
সর্বোপরি অবশ্যই ফ্যাক্টরি প্ল্যানিং আগে এবং পরবর্তীতে তা মাথায় রেখে ড্রয়িং।
লেখকঃ ইঞ্জিঃ মোঃ শরীফুল হাসান
Post a Comment